সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২০
কবীর আহমদ সোহেল: মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তি উপজেলা বড়লেখা। এই উপজেলার উত্তর প্রান্তের একটি গ্রাম গল্লাসাঙ্গন। প্রবাসীবহুল গ্রামটিতে বিরাজ করছে ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। রাজ্যের সব আতঙ্ক যেন এই গ্রামে। শঙ্কা -সংশয় নিয়ে দিনাতিপাত করছেন গ্রামের মানুষ। দু’ চারজন অতি সাহসী ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না ঘর থেকে। এটা কি তাদের অতি সচেতনতা? না অন্য কিছু?
না গ্রামে পুলিশও আসতে চায়না। বলছিলেন গ্রামের একজন। কিন্তু তার নামও বলা যাবেনা গণমাধ্যমে। প্রভাতবেলা এ নিয়ে একটি অনুসন্ধান চালায়। গ্রামবাসীর ভীত সন্ত্রস্ত জীবন যাপনের পেছনে দুটি কারণ পাওয়া যায়।
প্রথমত: এ গ্রামেরই এক যুবক আবু তাহের। কিছুদিন আগে অসুস্থ হন। করোনা উপসর্গের উপস্থিতি মিলে তার মাঝে। তিনি শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন। বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হবে।
সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসুলেশনে থাকা আবু তাহেরের (২৪) গল্লাসাংগন গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে । আবু তাহের বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন ৫ এপ্রিল। ৩নং ওয়ার্ডে তিনি আইসোলেশনে আছেন।
সিলেট শামসুদ্দিন হাসপাতালে আইসুলেশনে থাকা আবু তাহেরের (২৪) ৩দিন যাবত নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। তার ভাই আবু সুফিয়ান জানান, তিন দিন যাবত আমি আমার ভাইকে নিয়ে পড়ে আছি। নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। পাশের বেডের দু্ইজন মারা গেছেন। আমি ভয়ে আছি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে আগামী কাল সকালে নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান।
তাহেরের অসুস্থতায় গ্রামজুড়ে ভয় আর শঙ্কা । তাহের গ্রামে ঘুরেছেন, বেড়িয়েছেন। তার শরীরে করোনা ভাইরাসের কভিড-১৯ পজিটিভি হলে আর উপায় নেই। এমনটাই গ্রামবাসী ভাবছেন।
এই ভাবনা শঙ্কায় যখন গ্রামের লোকজন। তখন আরেকটি দু;সংবাদ তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কানাডার টরন্টোতে মৃত্যু হয়েছে এ গ্রামেরই একজনের। ৭২ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা হাজী তুতিউর রহমান স্থানীয় মাইকেল গেরন হাসপাতালে গত দুই সপ্তাহ ধরে আইসিইউতে থাকার পরে মারা যান।
তুতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি্ এই গল্লাসাঙ্গনে। গত ২৬ জানুয়ারীতে তিনি দেশে আসেন। থাকেন ২৮ ফেবরুয়ারী পর্যন্ত। কানাডায় ফিরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পযন্ত চলে যান না ফেরার দেশে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সমাজসেবী হিসেবে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন তুতিউর রহমান। চলাফেরায় তার সাথে সব সময় দুইজন লোক থাকতেন। জানান এলাকাবাসী। তার স্বজন পরিজন আশপাশের বাড়ীর লোকজন তো মিশেছেন হর হামেশা। গ্রামবাসীর আতঙ্ক এখানেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দেশে থাকাবস্থায় তুতিউর রহমানের কাশি ছিল।
এ অবস্থায় আতঙ্ক বিরাজ করছে গোটা গ্রামে। কেউ কারো সাথে কথা বলতেও নারাজ। বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগের। তুতিউর রহমান দেশে থাকাবস্থায় কাদের সংস্পর্শে গেছেন। তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারাইন্টাইনে নেয়ার নেই কোন তৎপরতা। এ বিষয়ে গ্রামের একজন সচেতন নাগরিক জানান, পুলিশকে জানানো হয়েছিল। তারাও আসতে ভয় পাচ্ছে। এখনো কেউ আসেনি।
এদিকে তুতিউর রহমানের পারিবারিক সুত্র জানায়, দেশ থেকে আসার পর পরই তিনি স্ব উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হয়। তা নেগেটিভ ফল আসে। অর্থাৎ তখন তিনি করোনায় আক্রান্ত হননি। সপ্তাহ খানেক পর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে তখন করোনা পজিটিভ দেখায়। পরিবারের লোকজনের ধারনা দেশ থেকে তিনি করোনামুক্তভাবেই গেছেন। সেখানে গিয়ে প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েই তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
প্রসঙ্গত:৫ এপ্রিল মারা যান তুতিউর রহমান। তিনি কানাডাস্থ মৌলভীবাজার জেলা এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ছিলেন। তার দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্ত্রী রয়েছেন।
তার মৃত্যু প্রসংগে, তুতিউর রহমানের শ্যালক আবদুল জব্বার জানান, আট–নয় দিন আগে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। আইসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন কয়েক দিন। তার অবস্থার খুব একটা উন্নতি হচ্ছিল না বলে পরিবারকে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তুতিউর রহমান স্ত্রী, প্রকৌশলী ছেলে তামিন রহমান, বড় মেয়ে তানি রহমান (স্থানীয় হাসপাতালে নার্স), হাইস্কুলে পড়ুয়া ছোট মেয়ে তাইরা রহমানসহ গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি