২৭ বছর ধরে যে যন্ত্রণা আর বিষাদে ভুগছি

প্রকাশিত: ২:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২০

২৭ বছর ধরে যে যন্ত্রণা আর বিষাদে ভুগছি

♦ নিজাম উদ্দিন তরফদার ♦

আজ ২৩ জুলাই ২০২০ইং আমার ছোট ভাই আজিম উদ্দীনের ২৭তম শাহাদাত বার্ষিকী। নবম শ্রেণীর ছাত্র আমার কলিজার টুকরা ছোট ভাইটিকে মসজিদের ভেতর পিটিয়ে খুন করা হয় আমার চোখের সামনে। ২৭টি বছর ধরে এ যন্ত্রণা, অন্তহীন বিষাদ নিয়ে বেঁচে আছি। প্রতিবছর এই দিনটা আসলেই আমাদের গোটা পরিবার বেদনা বিদূর হয়ে উঠে। আজকের ২৭তম এই শাহাদাত বার্ষিকীর দিনে মহান মাবুদের কাছে কায়মনোচিত্তে প্রার্থনা করি আমার ভাইকে যেন শহীদী মর্যাদায় জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন। একই সাথে খুনীদের বিচার যেন জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারি এ শক্তি সাহস সময় যেন মাবুদ আমাদের নসীবে রাখেন।

১৯৯৩ সালের ২৩ জুলাই, শুক্রবার ।দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের অন্তর্গত) আমাদের নিজগ্রাম সুঁড়িগাও মোহাম্মদপুর। এ গ্রামেরই জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ পর একটি কিশোরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। একটি কাঁঠাল নিলাম কে কেন্দ্র করে  সংঘর্ষ বাঁধিয়ে আমাদের ওপর চালানো হয় নির্মম হামলা। পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়া হয় সিলাম পি এল উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র আমার কলিজার টুকরা ছোট ভাই আজিম উদ্দিনকে। গ্রামের কতিপয় সন্ত্রাসী  পূর্ব-পরিকল্পিতভাবেই এ হত্যাকান্ড ঘটায়

 

বড় ভাইয়ের কাঁধে ছোট ভাইয়ের লাশ কি নির্মম ইতিহাস।তিন ভাই,তিন বোনদের মধ্যে অমি সবার বড় আর সে সবার ছোট।আমার হাতে আমার ভাই ২৩শে জুলাই রাত ৮.৩০ মিনিটের সময় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে না ফেরার দেশে চলে যায়। কি করুণ ইতিহাস এত বড় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল তার মধ্যে আমি এখনও বেঁচে আছি? জানিনা এর উত্তর আমি দিতে পারব কি না।কেন অাল্লাহ আমাকে এখন পর্যন্ত জীবিত রাখলেন-সেটা অাল্লাহ ভালো জানেন।

 

আরও পড়ুন  ২২ বছর ধরে পলাতক, অত:পর গ্রেফতার

অমিএটুকু বলতে পারি যতক্ষণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি ততক্ষণ ভালো থাকি। তার পেছনে এখন যার সবচেয়ে বড় অবদান যার উৎসাহ, শক্ত দিক নির্দেশনা মোতাবেক আমাকে অনুপ্রেরণায় যোগায়,কর্মশক্তি দেয় তিনি পরমশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব  নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজের গভর্নিংবডির সুযোগ্য সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এম.পি। তাঁর  দোয়া,স্নেহ-মমতা থাকার কারণে আমার পক্ষে বাঁচার তাগিদে কাজ করে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

 

গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার আমরা, আমার ছোটভাই আজিম উদ্দিন। মামলা পরিচালনা যারা করেছেন তারা এখনও জীবিত আছেন, দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রয়োজনবোধে সুষ্টু তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। তাহলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ আমার ভাইয়ের মামলার ফাইল মামলা পরিচালনা কারীদের নিকট রয়েছে। আমার বাবা দেশে আসার পর আমি কয়েক বছর ধরে মামলার ফাইল আমাদের হাতে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া সত্ত্বেও ফাইল পাইনি। তারা আমার পরিবার থেকে মনের দিক দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। আজও আমার পরিবারের কেউ এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ভুলতে পারিনি। বিশেষ করে আমার মা বাবাকে এক মুহুর্তের জন্য কেউ শান্তনা দিতে পারেননি। কারণ ঘটনার সময় আমার বাবা বিদেশে ছিলেন এবং আমার ভাইকে ২য় শ্রেণিতে রেখে চলে যান। আমি নিজেও তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছিলাম। সে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এ মায়ার পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কিন্তু বাবার সাথে তার দেখা হল না, কোনদিন দেখা হবেও না। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

 

আরও পড়ুন  ছাতকে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

জুলাই মাসব্যাপি আমাদের পরিবারে খতমে কোরআন , দোয়া দুরুদ চলমান থাকে।  আগামী শুক্রবার শহিদ আজিম উদ্দিন জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। আমার নিষ্পাপ ভাইটিকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। সকলে আমার নিষ্পাপ ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমীন।

 

নিজাম উদ্দিন তরফদার ♦ অধ্যক্ষ♦ নূরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা ডিগ্রি কলেজ, লাউয়াই, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ