জামালগঞ্জের শান্তিপুর স্কুলে অশান্তিতে পাঠদান

প্রকাশিত: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০১৭

অনিমেষ দাস, জামালগঞ্জ :

সুনামগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চল জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশা, দেখার কেউ নেই। ‘যদি স্কুলের ছাদ ভাইঙ্গা আমরার মাথার উপর পইরা যায়, এর লাগি আমরা ডরাইয়া কেউ ভিতরে বইয়া পড়ি না, বাইরে বইয়া আমরা পড়ি। কয়দিন আগে যে ভুইসাল (ভুমিকম্প) আইছিল, হেইদিন আমরার স্কুল ইলাখান ইলাখান সিদা লড়ছিল, হেই দিন আমরার স্কুলের আগের ফাটা আরো বড় অইয়া গেছে। আরো কয়টা নতুন ফাডা দিছে।’

এভাবেই নিজের স্কুলের দুরবস্থার কথা বলছিলো প্রত্যন্ত হাওর পাড়ের শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান। কথাগুলো শুধু মাহফুজুর রহমানের নয়, কথাগুলো তার সহপাঠি সোয়াবুর রহমান, মাকসুরা আক্তার,কুলসুমা আক্তার,শান্তি আক্তার,মোস্তাকিম,সাকিবুর, তানজিনা,তাসলিমা, লিজা আক্তারের।

 

সরজমিনে হাওর পাড়ে গিয়ে জানা গেছে, জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণি কক্ষ ভাঙ্গা, দেয়াল ফাটা, আর ছাদ থেকে আস্তরের খোসা পড়ার ভয়ে বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির পাঠদান চলছে শ্রেণি কক্ষের বাইরে খোলা আকাশের নিচে।

 

ক্লাস শেষে শিক্ষিকা বাইরে ক্লাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষিকা কাকলী আক্তার জানান, আগে থেকেই ভবনের চারদিকে থেকে ফাটা। গেল ভুমিকম্পের সময়ে আরো তীব্রভাবে ফাটা দেখা দেয়। উপরের ছাদের আস্তর খুলে পড়ছে। ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে কেউ ভিতরে ক্লাস করতে চায় না তাই বাধ্য হয়ে তাদের নিয়ে বাইরে ক্লাস করছি।স্কুল ভবনের ভিতরে প্রবেশ করেই দেখা যায় বাকী দুটি ক্লাস রুমও ভাঙ্গা। উপরের ছাদের রড বেরিয়ে গেছে। ফ্লোরও ভাঙ্গা, দুপাশের দেয়াল ভাঙ্গা। সামনের বারান্দায় মূল ভবনে দুই পাশেই বড় বড় ফাটল। তার মধ্যেই ৫ম শ্রেণি ও ৪র্থ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন দুই জন সহকারী শিক্ষিকা আর অন্য আরেক জন শিক্ষিকা বাচ্চাদের উপবৃত্তির ফরম প্রস্তুত করছেন।

আরও পড়ুন  বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাপান

 

সদ্য সরকারি শান্তিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়,স্বাধীনতা সংগ্রামের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন শাšিন্তপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক। প্রথম দিকে বিনা বেতনে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় বিদ্যালয়ের পাঠদান। দীর্ঘদিন পর রেজিষ্ট্রেশন হয়ে বেসরকারিভাবে চলার পর সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়েছে।শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ভূমির পরিমাণ ৬৬ শতক, বর্তমানে ৩৭ একর জায়গা নিয়ে ভবন ও মাঠ রয়েছে।

 

 

বেসরকারী থাকা অবস্থায় ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে ৪ রুম বিশিষ্ট বর্তমান বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করা হয়। নি¤œমানের কাজ হওয়ায় বিদ্যালয় ভবনটিতে গেল কবছর ধরেই ফাটল দেখা দেয়। বিদ্যালয়টি প্রাক প্রাথমিকে ১৪ জন, ১ম শ্রেণিতে ৪০ জন,২য় শ্রেণিতে ৪০ জন,৩য় শ্রেণিতে ৩৯ জন,৪র্থ শ্রেণিতে ২৩ জন,৫ম শ্রেণিতে ১৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ছাড়াও ১ জন পারা শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন,‘ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা স্কুলের ভিতরে পড়তে ভয় পায়, না জানি কোন সময় ছাদ ভাইঙ্গা পরে, এর লাইগগা বাইরে বইয়া পড়ে।

 

আরও পড়ুন  জনস্বার্থে শর্তসাপেক্ষে চলবে গণপরিবহন: ওবায়দুল কাদের

 

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল হাশেম তালুকদার বলেন,‘ আমার নাতীরা এই স্কুলে পড়ছে। ভবনটি ভাঙ্গা, শিক্ষার্থীরা ভিতরে পড়াশোনা করতে ভয় পায়। হাওর পাড়ের এই বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন হলে এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারে আসবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাহিদ হোসেন বলেন,‘বিদ্যালয় ভবন আগে থেকেই ফাটল ধরেছে। বর্তমানে আরো বেশী ফাটল দেখা দিয়েছে।ছাত্র- ছাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যারকেও জানিয়েছি, তিনি প্রাথমিক ব্যবস্থাও নিচ্ছেন।

 

জামালগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আলম ভুইয়া বলেন,‘ভবনটির ফাটল ও ছাদের আস্তরের খোসা খুলে পড়ার বিষয়টি আমার জানা আছে। শান্তিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশাপাশি হঠামারা ও গোপালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জরাজীর্ণ ভবন দেখিয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি এই তিনটি নতুন ভবনেরই অনুমোদন হবে।’
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ