মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়
প্রভাতবেলা ডেস্ক: ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী খোন্দকার তানভীর ইসলাম জয় পলাতক অবস্থায় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মারা গেছেন।

গত ১২ এপ্রিল কুয়ালালামপুরে একটি তালাবদ্ধ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দেশটির পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। গতকাল সোমবার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। তিনি এতদিন তারেক রানা নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ইন্টারপোল) শাখা জয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশের ইন্টারপোল শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা।

ঢাকায় পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, তানভীর ইসলাম জয়ের মৃত্যুর খবরটি সঠিক। তবে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে অবস্থান করায় দূতাবাসের কিছু করার ছিল না। একই কারণে তারা কোনো খোঁজখবর নেয়নি।

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরে অবস্থিত ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয় ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-ইন্টারপোল) আলী হায়দার চৌধুরী  বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ইন্টারপোলের কুয়ালালামপুর এনসিবির কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের জানাবে। এখন পর্যন্ত তারা কিছু জানায়নি। জয় ইন্টার পোলের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।’

কুয়ালালামপুরের স্থানীয় সূত্র বলেছে, সন্ত্রাসী জয় অনেক দিন ধরে কুয়ালালামপুরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একা বসবাস করছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। তাকে ডায়ালাইসিস করাতে হতো। ওই অ্যাপার্টমেন্টে একজন গৃহকর্মী দুই দিন পরপর এসে রান্না ও ঘর পরিষ্কার করে চলে যেত। গত ১২ এপ্রিল সকালে ওই গৃহকর্মী অ্যাপার্টমেন্টে এসে কলিংবেল বাজানোর পরও কোনো সাড়া না পেয়ে বিষয়টি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তাকর্মীদের জানান। তারাও ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দরজা ভেঙে জয়ের লাশ উদ্ধার করে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া বা ইউকেএম হাসপাতালে পাঠায়। সেই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ফারিদা মুহা নূর লাশের ময়নাতদন্ত করেন।

মালয়েশিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা জানান, রবিবার ইউকেএম হাসপাতালের অধ্যাপক ফারিদা মুহা নূরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার সহকর্মীর ফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সোমবার সকালে সেই সহকর্মীকে ফোন দেওয়া হলে সেখানেই ভাইয়ের লাশের অপেক্ষায় বসে ছিলেন জয়ের এক বোন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি লাশ নিতেই মালয়েশিয়ায় এসেছেন। অধ্যাপকের সহকর্মী তাকে কথা বলতে অনুরোধ করলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন  বিমান বাহিনীকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে- প্রধানমন্ত্রী

তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, জয়ের বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কুয়ালালামপুরে এসে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসে ভাইয়ের লাশের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দূতাবাস তাকে লাশ গ্রহণের এনওসি দেয়। সেটা হাসপাতালে জমা দিয়ে সোমবার তিনি লাশ গ্রহণ করেন। এরপর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাফন করেন।

কে এই জয়

নব্বই দশকের ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ লিয়াকত–হান্নানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোচিত হন তানভীর ইসলাম জয়। কলাবাগানের ধনাঢ্য একটি পরিবারের এ সন্তান সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের সঙ্গে মিলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেসময় তাদের গ্রুপটি পুলিশের কাছে সেভেনস্টার নামে পরিচিতি পায়। জয়ের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাকাণ্ড, দুটি হত্যাচেষ্টা, ভয়ংকর অস্ত্র দিয়ে মারাত্মক জখম এবং চাঁদার জন্য শারীরিক ক্ষতির হুমকি দেওয়ার অনেকগুলো অভিযোগ ছিল।

২০০০ সালে জয়কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় তারেক রানা নামে পাসপোর্ট করে ২০০১ সালে মালয়েশিয়া চলে যান। আবার ভারতে ফিরে আসেন। ভারতে থাকার সময় তার নামসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর পোস্টার প্রকাশ করে পুলিশ।

২০০৫ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে ইন্টারপোল ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করে জয়ের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমেদ খুনের ঘটনায় তার নাম আসে। ২০০৭ সালে রাজধানীর গড গিফট ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিতে গোলাগুলির ঘটনায়ও জয়ের জড়িত থাকার কথা ওঠে।

আরও পড়ুন  হলি অার্টিজান হামলা: সাগরসহ গ্রেফতার ২

২০০৭ সালে ভারতে অবস্থানের সময় সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। সেখানে কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে চলে যান কানাডায়। এরপর টরন্টোতে ‘এসজে ৭১’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। সেখানে রানা অ্যাজাক্স নামে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে কানাডা পুলিশ তার ব্যাপারে তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করে।

২০১৯ সালে কানাডার নির্বাচনের আগে তিনি সে দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। জয় দুই বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী তার আপন মামি। সেই ঘরে একটি সন্তান আছে। তার বিদেশি দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরেও একটি সন্তান রয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ