রঙিন মাছে জীবন রঙিন

প্রকাশিত: ৫:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩

রঙিন মাছে জীবন রঙিন
মধ্যবয়সি সাইফুল ইসলাম মিনুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার মানিকগঞ্জে। লেখাপড়া শেষে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে সেখানেই থিতু হন। ১৯৯৫ সালের কথা, হঠাৎ একদিন গ্রাম্য পরিবেশে বসবাসের ইচ্ছে জাগে। সেই মতো চলেও আসেন ত্রিশাল ও গফরগাঁও সীমান্তবর্তী লক্ষণপুর গ্রামে।

 

গ্রামে তো এসেছেন বটে, কিন্তু কাজ করবেন কী?

 

ভিন্ন কিছু করার বাসনা থেকে এ অঞ্চলের রেণু পোনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচিত হন। ইচ্ছা ছিল মাছের রেণু বিক্রি করবেন। তবে সেটা সাধারণ মাছ নয়, শৌখিন রঙিন মাছের রেণু বিক্রির কাজে হাত দেন।

 

২০০৭ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ১৬ বছর আগে জায়গা ভাড়া নিয়ে চৌবাচ্চায় ছোট পরিসরে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন। এই কাজের সাফল্যে জমি কিনে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন মিনু।

 

উদ্যোক্তা মিনু বলেন, ওই সময় ক্রেতা কম থাকলেও ভালো দাম পাওয়া যেত। ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়ার কারণে জাপান থেকে ছয়টি কই কার্প মাছের পোনা সংগ্রহ করে রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে পোনার সংখ্যা বৃদ্ধি করি। এরপর থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে প্রায় ২৪ প্রজাতির মাছ এনে ব্যবসা আরও প্রসারিত করেছি।

 

আরও পড়ুন  নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধূর আত্মহত্যা

বর্তমানে সাইফুল ইসলাম মিনুর খামারের ব্যাপ্তি ৩০ বিঘা জুড়ে। খামারে রয়েছে ২৬টি পুকুর। এসব পুকুরে বিদেশি মাছ ছাড়াও চাষ করছেন দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ।

 

উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম মিনুর খামারের নাম ‘আল-আমিন এসোরটেড হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ’। ভেতরে রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের পুকুর ও চৌবাচ্চা। এর পাশাপাশি খামারে আছে বিদেশি জাতের কুকুর, বিড়াল, পাখিসহ নানান প্রজাতির বিদেশি ফল ও শাকসবজির সমাহার। এলাকায় ‘রঙিন মাছ চাষি’ হিসেবে মিনু সবার কাছে পরিচিত। কারণ এ অঞ্চলে তিনিই প্রথম রঙিন মাছ চাষি। মিনুর উৎপাদিত রঙিন মাছ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাঠিয়েছেন দেশের বাইরেও। মিনুর দেখাদেখি এলাকার অনেকেই রঙিন মাছ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। রঙিন মাছ চাষ করে মিনুর সাফল্য এলেও করোনাকাল থেকে রঙিন মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে শখের বসে একটি পুকুরে রঙিন মাছ ছাড়া বাকি পুকুরগুলোয় চাষ করছেন দেশি মাছ।

 

মিনুর মাছের খামার দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন দর্শনার্থীরাও। এমনই একজন স্থানীয় রহমত আলী। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় প্রথম রঙিন মাছ চাষ করে সফল হন মিনু ভাই। তার কাছ থেকে দেখে অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষ করছেন। মিনু ভাই শৌখিন মানুষ। তার খামারে মাছের পাশাপাশি বিদেশি পশু, পাখিসহ বিদেশি ফল ও ফুলের চাষও হয়।

আরও পড়ুন  চন্দনাইশের বন্যার্তদের পাশে জেসিকা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান

 

কথা হয় সাইফুল ইসলাম মিনুর সঙ্গে। তিনি বলেন, নিজের ভালো লাগা থেকেই এই কাজ শুরু করি। বেশ কয়েক প্রজাতির বিদেশি মাছ আছে পুকুরে। বিদেশি রঙিন মাছের পোনা বিক্রি করে সফল হয়েছি। এখন এলাকার অনেকেই এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। করোনার পর থেকে রঙিন মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছি। নজর দিয়েছি দেশি মাছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল-ফল, পাখিও আছে খামারে। এখন একটি পুকুরে রঙিন মাছ চাষ করি। দুপুরে গোসলের সময় তাদের খাবার দিই, খেলা করি। শহরের যান্ত্রিকতার চেয়ে মাটির কাছে থাকতেই ভালোবাসি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ