ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মোস্তাক আহমদ আর নেই

প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২০

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মোস্তাক আহমদ আর নেই

প্রভাতবেলা ডেস্ক:

বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কক্সবাজারের রামু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাক আহমদ ইন্তেকাল করেছেন।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

প্রফেসর মোস্তাক আহমদ রামু উপজেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামে ৮ জানুয়ারি, ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রশিদ আহমদ মাস্টার।

তিনি অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা ছিলেন। পরে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলেন। তার মায়ের নাম মুনিরা বেগম।

গ্রামের মক্তবে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু তার। ১৯৫৫ সালে খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।

১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৬৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ পাস। পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। সাতকানিয়া কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন।

আরও পড়ুন  সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার মারা গেছেন

১৯৬৩ সালে কক্সবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নেন। ওই কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগদান। ১৯৬৫ সালে ঢাকা কলেজে ইংরেজির প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তৎপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে ইংরেজির প্রভাষক হিসাবে কর্মরত।

১৯৬৯ সালে পদোন্নতি নিয়ে সিলেট সরকারি কলেজে ইংরেজির প্রফেসর হিসাবে যোগদান করেন।

ইতোপূর্বে ১৯৬৭ সালে কমিশন্ড অফিসার হিসাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তানিদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে চাকরিতে ইস্তফা দেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রামু থানার ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ। অতঃপর পাক হানাদার বাহিনীর হাতে কক্সবাজারের পতন ঘটলে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বার্মায় (মিয়ানমার) শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ।

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুস সোবহানের সহযোগিতায় শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত ছাত্র-যুবক ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের সংগঠিত করে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গঠন করত কক্সবাজার বিভিন্ন অঞ্চলে শত্রুসেনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন  সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায় আর নেই

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া হুলাইন ছালেহ-নুর কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে সোভিয়েট ইউনিয়ন গমন। ‘ইন্টারন্যাশনাল লেনিন স্কুল’ অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে রামু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০০৫ সালে এপ্রিল মাসে অবসরগ্রহণ করেন। কক্সবাজার জেলার উচ্চশিক্ষা বিস্তারে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বহু গ্রন্থের প্রণেতা মোস্তাক আহমদের মৃত্যুতে সর্বমহলে শোক বিরাজ করছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ