সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ২:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০১৭
মাসরুর রাসেল জুড়ী থেকে ফিরেঃ “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুইপা ফেলিয়া,একটি ঘাসের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু”- হাজার বছর আগে রবী ঠাকুরের এ লেখার যথার্থতা খুঁজে মেলে জুড়ীর ‘বেলবাড়ি ঝর্ণা’য়। বড়লেখার মাধকুন্ড ঝর্ণা এতকাল সৌন্দযপিপাসু মানুষের তৃষ্ণা মেটালেও েএবার এটাকেও হার মানিয়েছি বেলবাড়ি ঝর্ণা।
যারা এই জায়গা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই জানেন বা ঘুরে এসেছেন তারা নিজেদের স্মৃতিগুলো আরো একবার একটু মনে করতে থাকেন। আর যারা এই জাগার নাম এর আগে কখনই শুনেন নি বা দেখা হয়নি তারা দুচোখ ভরে দেখে নিতে পারেন এই ঈদে বাংলার এই অপরুপ সৌন্দর্য।
এই ঈদে সিলেট শহর থেকে এসেছিলাম আমার বাড়ি জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে কিছুটা অবকাশ যাপনের জন্য। ঈদের নামায পড়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম ঘুরতে ঘুরার এক পর্যায় স্থানীয়লোকদের সহযোগিতায় খুঁজে পেলাম অপরুপ সৌন্দর্যের এক ঠিকানা, ঢুকে পড়লাম গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের বিনন্দপুর গ্রামে গহিন অরণ্যে পাহাড়ের উচু-নিচু পথ মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি দূরের পাহাড় গুলো আরো সুন্দর লাগছিলো।
দুপুরের সূর্য তখন মধ্যাকাশে,পাহাড়ে গহিন অরণ্যে পথে পথে সেলফি তুলতে তুলতে হঠাৎ চোখে পড়লো পাহাড়ের মাঝে ‘একটা বসতঘর’। এই বাড়ির উঠোন দিয়ে যেতে হয় বেলবাড়ি ঝর্ণায়। বাড়িতে পা রেখেই দেখতে পেলাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’। বাড়ি কর্তা সুদীপ বিশ্বাসের অনুমতি নিয়ে ধান ভাঙ্গার দৃশ্য দেখলাম।
১০-১৫ মিনিঠের রাস্তায় ভিতরে ঢুকার পর অনেক দূর থেকেই বেলবাড়ি ঝর্ণাধারার শব্দ শুনছিলাম,এই এলাকার লোকজন দুরে পাহাড়টি দেখিয়ে বললেন, এই জায়গাটাই বেলবাড়ি।
অসংখ্য বেল গাছের উপস্থিতি সত্যি জায়গাটার নামকরণের স্বার্থকতা রেখেছে। সুরমা ছড়া খাল পাহাড়ের বুকে বহে এসে বেলবাড়ি ঝর্ণার উৎপত্তি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানালেন।
কিভাবে যাবেন বেলবাড়ি ঝর্ণাঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের বেলবাড়ি গ্রামে । তবে গ্রামটিতে জনবসতি খুবই কম। পাহাড়ি ‘মুন্ডু’ সম্প্রদায়ের লোকজন পাহাড়ে ছড়িয়ে ছটিয়ে বসবাস করেন। জুড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এই র্ঝণা। বিনন্দপুর গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার পাথে হেটেঁ যেতে হয় ঝর্ণার ধারে। জুড়ী উপজেলা শহর থেকে আপনি আসতে চাইলে সিএনজি সময় লাগবে ৩০ মিনিট আর মোটরসাইকেলে ১৫ মিনিট। তবে বেলবাড়ি এলাকায় ঢুকার পর এলাকার লোকজনদের সহযোগিতা নিতে হবে কারন হলো ঝর্ণার কাছে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এবং সঠিক রাস্তা নেই।
আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখি এখানে আত্মীয় ছাড়া আর কোথায়
থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে জুড়ীতে শহরে থাকার মতো অনেক উন্নতমানের হোটেল গড়ে উঠেছে। সিলেট শহর থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফেরা যায়।
আর এই ধরণের ভ্রমণে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন, কেননা একটি দুর্ঘটনা আপনার ভ্রমনের সবটুকু আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। এখানে পানিতে নামতে হলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। পানির নিচে অনেক শক্ত মাঠি এবং সীমান্তের ওপাড় থেকে আসা স্রোতের বেগ অনেক বেশী ক্ষিপ্র থাকে। এ স্রোতে না বুঝে নেমে পড়লে পানির নিচের শক্ত মাঠিতে পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গোয়ালবাড়িতে অবস্থিত বেলবাড়ি। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা বেলবাড়ি ঝর্ণা প্রচারের অভাবে এবং যাতায়াতের অভাবে তেমন পর্যটকদের আনাগোনা নেই। বিশেষ করে দলবল নিয়ে ও যারা বেশি ভীড় এড়িয়ে চলতে চান তাদের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান এই বেলবাড়ি ঝর্ণা।
এ ব্যাপারে কথা হয় গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের তরুন সমাজসেবক জাহেদ তালুকদারের সাথে তিনি জানান,সরকার চাইলে এই জায়গাটিকে পর্যটন শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারে,এখানে একটি ভালো রাস্তা তৈরী করে দিলে অনেক পর্যটন আসবে আশা করি।
বেলবাড়ি ঝর্ণাধার দু’পাশের সবুজ চা বাগান পেছনে ফেলে আপনাকে যেতে হবে গন্তব্যে। এই পথ ধরে গেলে মনে হবে, পুরো পৃথিবীটাই যেন সবুজের রাজ্য। আর আঁকা বাঁকা পাহাড়ি উঁচুনিচু পথটাকে কেউ বড় অজগর বলেও ভুল করতে পারেন,এই ঈদে কৃত্রিম যান্ত্রীকতাকে দূর ঠেলে ক্লান্তি দূর করতে
চলে যেতে পারেন বেলবাড়ি ঝর্ণায়।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি